পৃথিবীর ৭টি আশ্চর্য। Seven Wonders Of The World.

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিশ্বের আশ্চর্য জিনিস এর তালিকা তৈরি করে চলেছে। তার মধ্যে কোনোটা প্রাকৃতিক এবং কোনোটা কৃত্তিম ভাবে তৈরি। এটি সাধারণত পৃথিবীর মধ্যেই কোনো আশ্চর্য, সুন্দর বা অসাধারণ জিনিসের তালিকা ২০০৭ সালে এই আশ্চর্য জিনিসের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয় পৃথিবীর ৭টি আশ্চর্য এর তালিকা নীচে বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হলো।

পৃথিবীর ৭টি আশ্চর্য।

১. চীনের মহাপ্রাচীর ( The Great Wall Of China ), চীন।
                                
চীনের মহাপ্রাচীর, বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য
চীনের মহাপ্রাচীর


এটি হল বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য এই প্রাচীরটি তৈরি করা হয়। অনেক রাজবংশ এই প্রাচীরটি নির্মানে অংশগ্রহন করেছে এবং অনেক দূরবর্তী পাহাড়, মরুভূমিতে এই অনেক গুলি বিভাগে অবস্থিত। এই প্রাচীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এবং মধ্যে বিখ্যাত চীনের প্রাচীর টি চীনের প্রথম সম্রাট কিন সি হুয়াভের অধীনে নির্মিত হয়েছে।

বিভিন্ন রাজবংশশে নির্মিত  চীনের মহান প্রাচীর এর দৈর্ঘ্য ২১,১৯৬ কিলোমিটার (২০১২ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি অধিদপ্তর দ্বারা ঘোষিত)। মিং রাজবংশের গ্রেট ওয়ালের দৈর্ঘ্য ৮৮৫১ কিলোমিটার এবং বেইজিংয়ের প্রায় ৫২৬ কিলোমিটার। এই প্রাচীরটির উচ্চতা প্রায় ৪ মিটার থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত (১৫ থেকে ৩০ ফুট) এবং চওড়া প্রায় ৯ মিটার এরও বেশি (৩২ ফুট)।

মিং রাজবংশের সময় প্রায় ২০০ বছর এই প্রাচীরটি নির্মানের কাজ চলে, তার আগেও বহু বছর লেগেছিল এই প্রাচীরটি নির্মানে। এই প্রকচিরটি নির্মাণের প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোক লেগেছিল। সাধারণ মানুষ, শ্রমিক এবং সৈন্যরা এই নির্মানে অংশোগ্রহন করে। উপাদান হিসেবে ব্যাবহিত হয় মাটি, পাথর, কাঠ, ইট, বলি।
এই প্রাচীরটিতে অনেক গুলি ওয়াচ টাওয়ার আছে যার মধ্যে ৭২৩ টি বীকন টাওয়ার, ৭০৬২ টি লুকানো টাওয়ার এবং ৩৩৫৭ টি ওয়াল প্লাটফর্ম রয়েছে। যেখান থেকে সৈন্যরা শত্রু পক্ষের উপর নজরদারি করতো। ২০০৭ সালে এই প্রাচীর বিশ্বের নতুন সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ র পরিদর্শনের সময়, গ্রীষ্মকালে সকাল ৬:৩০ থেকে সন্ধ্যে ৭:০০ পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৭:০০ থেকে সন্ধ্যে ৬:০০ পর্যন্ত।


আরো পড়ুন......
ভারতের প্রধানমন্ত্রী দের নামের তালিকা।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দের নামের তালিকা।


২. পেত্রা ( Petra ), জর্দান।
                                         
পেত্রা, জর্দান, বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য
পেত্রা, জর্দান।

এটি বর্তমানে জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রাম ‘ওয়াদি মুসা’ র ঠিক পূর্বে ‘হুর’ পাহাড়ের পদতলে অবস্থিত। পেত্রা প্রায় ২৬৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত, উচ্চতা প্রায় ৮১০ মিটার।

৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বব্দ পর্যন্ত এটি গাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী ছিলো। পেত্রা নামটি একটি গ্রিক শব্দ ‘petros’ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। যার অর্থ পাথর। পাথরের তৈরী বলে এমন নামকরন করা হয়েছে। একসময় এই নগরীটি অত্যন্ত সুন্দর ও সুরক্ষিত একটি দুর্গ ছিল। পাথরের গায়ে খোদাই করে এই নগরটি নিপুল ভাবে তৈরী হয়েছিল। নগরটির চারপাশে পাহাড়ে অনেক ঝর্নাও ছিল। পেত্রা র মূল শহরের একটিই প্রবেশদ্বার যেটির নাম ‘হার্ডিয়েন ফটক’। বর্তমানে সেগুলি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ধংস হয়ে গেছে। পেত্রা র মূল আকর্ষন হল ‘খাজানাতে ফেরাউন’ মন্দির।

মধ্যযুগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে পেত্রা র কিছু অংশ ধংস হয়ে যায়। প্রায় ৫০০ বছর এটি সারা পৃথিবীর আলোচনার বাইরে ছিলো। সেই কারনে একে ‘লস্ট সিটি’ র নামেও জানা যায়, ১৮১২ সালে সুইস পর্যটক জোহান লুভিগ বুর্খাদত এটিকে পুনরায় সারা বিশ্বে নতুন করে উপস্থাপনা করে। পেত্রার মধ্যে একটি অর্ধগোলাকার নাট্যশালা রয়েছে, যেখানে ছিলো দেড় হাজার দর্শক একসাথে বসতে পারতো। এছাড়া এখানে ছিলো দেড় হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতার একটি স্টেডিয়াম। দশ হাজার বর্গ ফুটের একটি বিচারালয়। এছাড়া এখানে লাইব্রেরী এবং সৈন্যদের ব্যারাক ও ছিলো।

১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষনা করে। ২০০৭ সালে পেত্রাকে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে নতিভুক্ত করা হয়।


আরো পড়ুন....
পরমবীর চক্র প্রাপকের তালিকা।
ভারতরত্ন পুরস্কার প্রাপক।


পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য।


৩. দ্য রোমান কলোসিয়াম (The Roman Colosseum) রোম, ইতালি।
                                 
কলোসিয়াম
কলোসিয়াম
ইতালির রোম শহরে অবস্থিত একটি বৃহৎ ছাদবিহীন মঞ্চ। এটি সাধারনত বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং কোনো প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। ৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দের মাসে কোনো এক সময় এটি নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছিল। ৮০ খিস্টাব্দে সম্রাট তিতুসের রাজত্ব কালে এটি সম্পন্ন হয় কলোসিয়াম-এর উচ্চতা ৪৮ মিটার, দৈর্ঘ্য ১৮৮মিটার এবং চওড়া ১৫৬ মিটার। আর প্রত্যেক তলায় ৮০টি করে তিনটি লেভেলে মোট ২৪০টি আর্চ আছে।

এটি প্রস্তুত করা হয়েছে পাথর, কাঠ, মাটি, বলি ইট, ইত্যাদি দিয়ে। এখানে লোক ধারন ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার। মধ্যযুগে বেশ কিছুবার ভূমিকম্পের ফলে এর বেশিরভাগ অংশ ধংস হয়ে যায়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এম্পিথিয়েটারের যা গ্রিনেস ওয়ার্ল্ড রেকড ধরে রেখেছে। এই এম্পিথিয়েটারের মূল আকর্ষণ ছিল গ্ল‍্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ এবং হিংস পশুর লড়াই। আর গ্রাউন লেভেলে এই কলোসিয়াম পরিদর্শনে।

 ইউনেস্কো ১৯৯০ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেয়। ২০০৭ সালে একে বিশ্বের সপ্তমশ্চর্যের মধ্যে একটি বলে নির্বাচিত করা হয়।


অন্যান্য পোস্ট গুলো......
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গের শহর।


৪. চিচেন ইতজা (chichen itaza)য়ুকাতান উপদ্বীপ, মেক্সিকো।
                    
চিচেন-ইতজা
চিচেন ইতজা

চিচেন ইতজা মেক্সিকোর উত্তরে য়ুকাতান উপদ্বীপে অবস্থিত মায়া সভ্যতার একটি বড় শহর।
 এই শহরটির আয়োতন ছিল ১০০ বর্গ কিলোমিটার। অনুমান করা হয় প্রায় ১৪০০ বছর আগে ৬০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। এই চিচেন ইতজার কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল একটি পিরামিড। এটা প্রি-কলাম্বিয়ান যুগের একটি কেন্দ্রবিন্দু। এই পিরামিড টি মূলত সূর্য দেবতার মন্দির হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মন্দিরটি চিচেন ইতজার প্রতীক।

এই পিরামিডটির চারদিকে ৯১টা করে সিঁড়ির ধাপ রয়েছে। এবং সব মিলিয়ে মোট ৩৬৫টি সিঁড়ির ধাপ আছে। এই শহরটিতে প্রায় ৫০,০০০ এর ও বেশি মানুষ বাস করতো। এই শহরটিতে একটি বন্দর থাকায় এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্রও গড়ে ওঠে। এখান থেকে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে সোনা, বিভিন্ন পন্য, মূল্যবান দ্রব্য আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। ১৮০০ সালে চিচেন ইতজা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। ১৯৮৮ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গৃতীত  হয়। ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চাযের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

 প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষের বেশি মানুষ চিচেন ইতজা দর্শন করতে যায়। ২০০৭ সালে এটি মেক্সিকোর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল পর্যটকদের কাছে।


আরো পড়ুন.....
ভারতের সকল রাজ্যের রাজধানী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল।
পশ্চিমবঙ্গের জেলা গুলোর নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ।


৫. মাচুপিচু (পেরু)।
                     
মাচুপিচু
মাচুপিচু

মাচুপিচু পেরুর সবচাইতে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। এটি কোস্কো থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম, সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতার পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এটি দুই পাহাড়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

 এই শহরটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। এই শহরটি নির্মাণের ১০০ বছরের মধ্যেই এটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। ইনকা সভ্যতা স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হবার কারনে এটি ধ্বংস হয়। তারপর কয়েকশ বছর এই শহরটি অজ্ঞাত অবস্থায় থাকে। এরপর ১৯১১ সালে এক মার্কিন ঐতিহাসিক এই শহরটির খোজে বের করেন এবং এটিকে বিশ্বের নজরে তুলে ধরেন। তারপর থেকে মাচুপিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়।

 ১৯৮১ সালে মাচুপিচুকে পেরুর ‘সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এই শহরটিতে পুরোনো ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক উদ্ভিদ, জীব এবং বৈচিত্র।

 ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এই মাচুপিচুকে বিশ্ব ঐতিয‍্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে নীতিভুক্ত করা হয়।


অন্যান্য পোস্ট গুলো......
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু।
পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষ।


৬. তাজমহল (tajmahal), উত্তরপ্রদেশ, ভারত।
                        
তাজমহল
তাজমহল

তাজমহল উত্তরপ্রদেশ আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন।

যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই সৌধটির নির্মান কার্য শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এবং সম্পূর্ণ হয় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে। তাজমহলের উচ্চতা ৭৩ মিটার। এবং এটির প্রধান নির্মাতা ছিলেন উস্তাদ আহমেদ লাহৌরি। এটি নির্মান কার্যে প্রায় ২২হাজারেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিলএবং খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন টাকা, যা বর্তমানে ৫২.৮ বিলিয়ন (২০১৫)।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষের বেশি মানুষ এটি পরিদর্শন করতে যায়। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিয‍্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে। এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়।


** আরো পড়ুন ** ভারতের জনসংখ্যা ( বর্তমান আপডেট )
                              
                               মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ীদের তালিকা 

৭. ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি, রিওদা জেনরিও, ব্রাজিল।
                       
রিডিমার-স্ট্যাচু
রিডিমার স্ট্যাচু

এটি ব্রাজিলের দক্ষিণপূর্ব শহর রিও ডি জেনেরিওতে যিশুর একটি বিশাল মূর্তি। পাহাড়ের চূড়ায় যিশু দুহাত প্রসারিত করে আছেন।

যেই পাহাড়টিতে মূর্তিটি রয়েছে সেটির উচ্চতা প্রায় ৭১৩ মিটার বা ২৩৪০ ফুট। ১৯২১ সালে এই মূর্তিটি তৈরীর কাজ শুরুকরা হয়। এই মূর্তিটির প্রধান নির্মাতা ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কি। ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। সম্পূর্ণ গ্রানাইট দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল এই মূর্তিটি, এবং মূর্তিটির উচ্চতা ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট।

পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের শতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্দেশ্যে ৭ই জুলাই ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়। এবং এক একটি হাতের দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট। ‘সোয়াপষ্টোন’।