পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষ।


উৎপাদন : রাজ্যের প্রধান ফসল ও মুখ্য খাদ্যশস্য ধান।কর্ষিত ভূমির 71 শতাংশে ধান চাষ হয় । 2014 - 15 সালে ভারতের 53.76 লক্ষ হেক্টর( দ্বিতীয়, 12.19%) থেকে 13.91% ( 146.77 লক্ষ টন ) ধান উৎপাদন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থান অধিকার করে। ধানের উৎপাদনশীলতায় ভারতে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ ( 27.30 কুইন্টাল/হেক্টর )। মোট উৎপাদনে পূর্ব বর্ধমান প্রথম , পশ্চিম মেদিনীপুর দ্বিতীয় ও মুর্শিদাবাদ তৃতীয়।
                      
পশ্চিমবঙ্গের ধান চাষ
ধান চাষ।
উৎপাদক অঞ্চল : পশ্চিমবঙ্গের 23 টি জেলার মধ্যে দার্জিলিং,পুরুলিয়া , ও কলকাতাতে ধানচাষ হয় না। 70% ধান পূর্ব বর্ধমান , পূর্ব পশ্চিম মেদিনীপুর , উত্তর দক্ষিণ 24 পরগনা , উত্তর ও দক্ষিণদিনাজপুর, বীরভূম , হুগলি ও বাঁকুড়া জেলায় উৎপাদন হয়। বাকি 30% হাওড়া , জলপাইগুড়ি , কোচবিহার , মালদহ , মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া তে উৎপন্ন হয়।


1. আমন ধান : পশ্চিমবঙ্গে উৎপন্ন ধানের 78% হলো আমন ধান। রাজ্যের সব জেলাতে চাষ হয়।এই ধান উৎপাদনে পূর্ব বর্ধমান প্রথম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর দ্বিতীয়। পূর্ব  বর্ধমান কে ' পশ্চিমবঙ্গের ধানের গোলা ' বলা হয়।

2. আউস ধান : রাজ্যের উৎপাদন ধানের 2 % হলো আউস ধান। এই ধান উৎপাদনে মুর্শিদাবাদ প্রথম ও নদিয়া দ্বিতীয়। তাছাড়া কোচবিহার ও দুই দিনাজপুরে চাষ হয়।

3. বোরো ধান : পশ্চিমবঙ্গে 20% ধান বোরো ধান । পূর্ব বর্ধমানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে জলসেচ প্রসারের কারনে দক্ষিণ বঙ্গে মুর্শিদাবাদ , দুই 24 পরগনা , পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ,হুগলি , নদিয়া বীরভূমে চাষ হয়।

4. সুগন্ধি ধান : পূর্ব বর্ধমান , হুগলি , নদিয়া জেলায় গোপালভোগ , গোবিন্দভোগ , সিতাভোগ , কাটারিভোগ , বাসমতি , রাঁধুনিপাগল ইত্যাদি উচ্চ মানের সুগন্ধি ধান চাষ হয়।


**আরো পড়ুন ** ভারতের জনসংখ্যা ( বর্তমান আপডেট )


পশ্চিমবঙ্গের ধান চাষ উন্নতি লাভের কারণ :


ক. প্রাকৃতিক কারণ :

১. অনুকূল জলবায়ু : মৌসুমি জলবায়ু তে গড় বার্ষিক 100-200 সেমি বৃষ্টিপাত এবং 25 ডিগ্রী-30 ডিগ্রী উষ্ণতা ধান চাষের উপযোগী। ফলে আমন ধানের প্রচলোন বেশি।

২. উর্বর মাটি : দার্জিলিং ও পুরুলিয়া বাদে গাঙ্গেয় সমভূমির উর্বর পলি , দোআঁশ , বেলে মাটি ধান চাষ প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ কারন। এই সামান্য অম্লধর্মী মাটি ধান চাষের আদর্শ। মাটির নীচে অপ্রবেশ‍্য কাদাস্তর থাকায় মাটির জলধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।

৩. বিস্তৃত সমতল ভূপ্রকৃতি : বিস্তীর্ণ সমতল প্লাবন ভূমি ও বদ্বীপ সমভূমি তে কৃষিজমির প্রাচুর্য এখানে ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।

খ . অর্থ - সামাজিক কারণ :


১. সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রাচুর্য : জন ঘনত্বে দ্বিতীয় পশ্চিমবঙ্গ। অধিবাসী গণ বংশ পরম্পরায় প্রাচীনকাল থেকে ধান চাষে দক্ষ। ফলে সারাবছর ধরে ধান চাষে পর্যাপ্ত সংখ্যক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।

২. ধানের ব্যাপক চাহিদা : জনাকীর্ণ রাজ্য বাসীদের প্রধান খাদ্যরূপে চালের সমৃদ্ধ দেশীয় বাজার ধান চাষের উন্নতি ঘটিয়েছে।

৩. আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি : 1960 এর দশকে সবুজ বিপ্লবের প্রভাবে সংগঠিত জলসেচ , HYV ধানবিজ , রাসায়নিক সার , কীটনাশক , উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে সারাবছর ধরে নিবিড় প্রথায় বাণিজ্যিক ভাবে ধান চাষ করে ফলন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

৪. জলসেচের প্রসার : খাল , কূপ-নলকূপ , জলাশয় সেচের ব্যাপক প্রসারের ফলে বোরো ও আউস চাষের এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।


#আরো পড়ুন...... ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য  
                             
                                 কফি চাষের অনুকূল পরিবেশ
                               
* সমস্যা :
  1. ধানের হেক্টর প্রতি ফলন খুব কম। মাত্র 2240 কেজি/হে:
  2. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর অতি নির্ভরতার জন্য অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি তে ধানের উৎপাদন দারুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  3. জমি ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত হওয়ায় ভারী বৃহৎ যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করা যায়না।
  4. পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্য ধান সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যাবস্থা খুবই অনুন্নত।